"ডিসাইফারিং দ্য সোশিও-লিগাল ফ্রেইমওয়ার্ক ফর প্রিভেনশন অফ রেইপ ইন বাংলাদেশ"

 

ধর্ষণের সংস্কৃতি'র উদ্বেগজনক বৃদ্ধি সারা বছর জুড়ে নেতাকর্মী, নীতিনির্ধারক ও শিক্ষাবিদগণ সহ সাধারণ মানুষের জন্য একটি আশংকাজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ উপলক্ষে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল এন্ড পলিটিকাল রিভিউ (ডিইউএলপিআর) কর্তৃক “বাংলাদেশে ধর্ষন প্রতিরোধে সামাজিক আইন কাঠামো নির্ধারণ” শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারটি আয়োজন করা হয় যা ডিইউএলপিআর এর ফেইসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় ১৪ই অক্টোবর, ২০২০ তারিখ, রাত ৮.০০ টায়। 

আলোচনার প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল সম্প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের গণদাবীর মুখে ধর্ষনের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড বিধানের আগের অবস্থা এবং এই সংশোধিত আইনের পরবর্তী যাত্রা সম্পর্কে আমাদের দেশের আইন এবং সমাজবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ। আলোচনার সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী প্রফেসর ও গবেষক তাসলিমা ইয়াসমিন, ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সম্মানিত ডিন প্রফেসর ডা. সাদেকা হালিম এবং ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি জাস্টিস এ.এইচ.এম. শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক। 


আলোচনার শুরুতে সহকারী প্রফেসর তাসলিমা ইয়াসমিন ধর্ষন আইনের সংশোধন এবং পরিবর্তন সম্পর্কে নিজস্ব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে আলোচনা শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশে বিদ্যমান ধর্ষনের সংজ্ঞার প্রতি আলোকপাত করেন। ধর্ষিতার প্রতি প্রতিকূল আচরণ, ধর্ষনের মামলাকে সাধারণত মিথ্যা মামলা মনে করার মানসিকতা এবং বিশেষত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযুক্তের প্রতি সহনশীল হওয়ার প্রবণতা ইত্যাদি আলোচনায় ফুটিয়ে তোলেন। এসকল বিষয় যেভাবে একটি ধর্ষনের মামলাকে শিথিল করে দিতে পারে এ বিষয়ে তার বক্তব্য প্রদান করেন। আলোচনায় সম্মতির সংজ্ঞায়ন, ধর্ষনের সংজ্ঞার পরিবর্তন এবং যৌতুকের মামলাকে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন থেকে পৃথক করার বিষয়টি উল্লেখ করেন যা মিথ্যা মামলা প্র‍তিহত করতে সাহায্য করতে পারে। 


উক্ত আলোচনায় প্রফেসর ডা. সাদেকা হালিম পুরুষতান্ত্রিক সামাজিকীকরণ যেভাবে ধর্ষনকে নারীর জন্য অপমানজনক এবং জটিল একটি অধ্যায় হিসেবে পরিণত করেছে সে সম্পর্কে তার মতামত দেন।  তার বক্তব্যে উঠে এসেছে শ্রেণিবৈষম্য এবং প্রান্তিক অঞ্চলের নারীদের প্রতি বৈষম্য। নারীদেরকে ভোগ্যপণ্য মনে করার বা তাদের দমিয়ে রাখার, প্রতি পদে নিয়ন্ত্রণ  করার পুরুষেতান্ত্রিক মনোভাবের পরিবর্তন যেভাবে ধর্ষন রোধে ভূমিকা রাখতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা করেন। ধর্ষন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন সে কথা উল্লেখ করেন। নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের বিকল্প হিসেবে শুধু নারীদের জন্য আলাদা মন্ত্রীশাসিত মন্ত্রণালয় এবং শিশুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব করেন। 


এ সম্পর্কে সাবেক বিচারপতি জাস্টিস এ.এইচ.এম. শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক প্রথমেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে দ্রুত কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য। ধর্ষনের জন্য উভয়পক্ষের বাধ্যতামূলক ডি.এন.এ টেস্ট এর বিষয়টির কার্যকারিতা সম্পর্কে তার মতামত দিয়েছেন এবং ডি.এন.এ পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি বাড়ানোর প্রস্তাব উল্লেখ করেছেন। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড রাখা এবং ১৮০ দিনে ধর্ষনের বিচার সম্পন্ন করার উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তিনি এছাড়াও এন্টি টেররিজম ইউনিটের মত এন্টি রেইপ ইউনিট গড়ে তোলার পক্ষে মতামত দিয়েছেন যেখানে শুধুমাত্র ধর্ষনের মামলা নিয়ে কাজ করা হবে। 


আলোচনায় সামাজিকীকরণে পরিবর্তন আনার, ধর্ষনের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনার এবং ধর্ষিতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনার বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে। ধর্ষনের জন্য ধর্ষক ছাড়া আর কোন কিছুই যে দায়ী নয় এটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত ওয়েবিনারটি পরিচালনা করেছেন ডিউএলপিআর এর এডিটর ইন চিফ শাহ্‌রিমা তানজিন অর্ণি। 



ডিইউএলপিআর'র জন্য প্রতিবেদনটি লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল এন্ড পলিটিক্স রিভিউ এর ইন্টার্ন নিশাত তাসনিম হৃদি

Post a Comment

0 Comments